রাজশাহীতে প্রান্তিক কৃষকসহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপূরণের দাবিতে মানববন্ধন।

রাজশাহী প্রতিনিধি:

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া প্রকৃত ব্যাক্তিদের ন্যায্য ক্ষতিপূরণ প্রদানসহ পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছেন তরুণেরা। এ দাবিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। রোববার দুপুরে তরুণ সংগঠন ইয়ুথ এ্যাকশন ফর সোস্যাল চেঞ্জ-ইয়্যাস রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকারের মাধ্যমে এই স্মারকলিপি প্রদান করে।

দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রনালয় এবং পরিকল্পনা মন্ত্রানালয়ের মন্ত্রী ও প্ল্যানিং কমিশনের (জিইডি) সিনিয়র সেক্রেটারিকে স্মারকলিপির অনুলিপি ডাকযোগে প্রেরণ করা হয়েছে।

এছাড়াও একই দাবিতে রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিলকেও পৃথক স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। বাগমারার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাকে স্মারকলিপির অনুলিপি ডাকযোগে প্রেরণ করা হয়েছে।

তরুণ সংগঠন ইয়ুথ এ্যাকশন ফর সোস্যাল চেঞ্জ-ইয়্যাস সভাপতি মো. শামীউল আলীম শাওন ও সাধারণ সম্পাদক নাজমুল ইসলাম আকাশ স্বাক্ষরিত এ স্মারকলিপিতে জানানো দাবিগুলো হলো: রাজশাহীর বাগামারা উপজেলার বন্যার্দূর্গতদের জন্য প্রয়োজনীয় ত্রাণ ও পূর্ণবাসন প্রদান নিশ্চিত করতে হবে, বন্যা কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া প্রকৃত ব্যক্তিদের ন্যায্য ক্ষতিপূরণ প্রদান নিশ্চিত করতে হবে, বন্যায় কর্মহীন হওয়া ব্যক্তিদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিতে হবে, ফকিরনী ও বারানই নদী খনন করে নদীর নাব্যতা নিশ্চিত করতে হবে এবং ফকিরনী ও বারানই নদীর ক্ষতিগ্রস্থসহ সম্পূর্ণ বেড়িবাঁধ সঠিকভাবে সংস্কার ও সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে।

স্মারকলিপি প্রদান করার পূর্বে নগরীর সাহেব বাজার জিরোপয়েন্টে মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। তরুণ সংগঠন ইয়ুথ এ্যাকশন ফর সোস্যাল চেঞ্জ-ইয়্যাস সহ তিনটি সংগঠন এই মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করে। প্রায় ঘন্টাব্যাপী চলা এ মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন, তরুণ সংগঠন ইয়ুথ এ্যাকশন ফর সোস্যাল চেঞ্জ-ইয়্যাস সভাপতি মো. শামীউল আলীম শাওন। মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য পেশ করেন, বাগমারা উপজেলার ০৮ নং কাচারী গোয়ালিপাড়া ইউনিয়নের ০৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. রবিউল ইসলাম, নরদাশ ইউনিয়নের ০১নং ওয়াডের ইউপি সদস্য মো. সেলিম রেজা, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ স্থানীয় বাসিন্দা সেতাব আলী, বারিক হোসেন প্রমূখ।

বক্তব্য প্রদানকালে বক্তারা বলেন, টানা বর্ষণের সঙ্গে উজানের পানির তোড়ে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার দ্বীপপুর ইউনিয়নের জুলাপাড়ার মরাঘাটির সংলগ্ন ফকিরনী নদীর ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি ঢুকে উপজেলার উত্তর এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। ইউনিয়ন গুলোতে বন্যার পানি ঢোকার কারণে প্রায় অধিকাংশ কাঁচা ঘরবাড়ি ধসে পড়ে পানিতে বিলিন হয়ছে এবং বাঁকিগুলোও হুমকির মাঝে রয়েছে।

বক্তারা আরো বলেন, প্রায় অনেক পাকা বাড়িতেও দেখা দিয়েছে ফাঁটল। বন্যার পানিতে শত শত হেক্টর পাকা ধান, পাট ও সবজি ক্ষেত ভেসে গেছে এবং ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে পানবরজ। এছাড়াও পুকুর ও বিলের চাষ করা কয়েক হাজার কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে। অনেকেই আশয় নিয়েছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও উঁচু জায়গাতে। প্রায় অধিকাংশ কাঁচা পাকা সড়ক ডুবে গেছে পানিতে ফলে ইউনিয়নের মানুষের উপজেলা সদরের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে পড়েছে। বন্যায় কাচারীকোয়ালীপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স্রও প্লাবিত হয়েছে। দিশেহারা হয়ে পড়েছে বানভাসীরা।

পাঁচ দিনে তিন বেলা খাবার খেয়েছেন বলে উল্লেখ করে মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, পানিবন্দি থেকে খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও নিরাপদ আশ্রয়ের অভাবে সীমাহীন দুর্ভোগে আছেন এসব অঞ্চলের দিনমজুর-ক্ষেতমজুরসহ খেটে খাওয়া মানুষ। পর্যাপ্ত ত্রাণ না মেলায় অনাহারে, অর্ধাহারে দিন কাটছে তাদের। পরিবার পরিজন নিয়ে রান্নার জায়গা না থাকায় অনেকেই খাদ্য সংকটে ভুগছেন। গৃহপাালিত পশু নিয়েও বিপাকে পড়েছেন তারা। অভাব দেখা দিয়েছে গোখাদ্যের।

বক্তারা প্রান্তিক কৃষকসহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া প্রকৃত ব্যাক্তিদের ন্যায্য ক্ষতিপূরণ প্রদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দাবি জানান। একই সাথে অবিলম্বে ফকিরনী ও বারানই নদী খনন করে নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনা এবং ফকিরনী ও বারানই নদীর ক্ষতিগ্রস্থসহ সম্পূর্ণ বেড়িবাঁধ সঠিকভাবে সংস্কার ও সংরক্ষণ নিশ্চিতের দাবি জানান তারা।

তরুণ সংগঠন ইয়ুথ এ্যাকশন ফর সোস্যাল চেঞ্জ-ইয়্যাসের সাথে সুর্বণ রক্তদান সংস্থা, ব্লাড ব্যাংক রাজশাহী ও সেবা পরিবার যৌথভাবে এ মানববন্ধনের আয়োজন করেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *