
মোঃ সিরাজুল হক রাজু স্টাফ রিপোর্টার।
উচ্চ আদালতের নির্দেশে বরিশালের বাকেরগঞ্জে ধর্ষণ মামলায় গ্রেফতার ৪ শিশুকে অভিভাবকের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা। শুক্রবার (৯ অক্টোবর) সকালে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত গাড়িতে করে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পর শিশুদের কোলে নিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন অভিভাবকরা। তাদের দাবি, শত্রুতামূলকভাবে বাদী এ সব শিশুদের ধর্ষণ মামলায় ফাঁসিয়েছে। তারা এর সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন। প্রশাসন থেকে সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাস দেওয়া হয়।
জামিনপ্রাপ্তরা হলো—সাইদুল ইসলাম, সোলায়মান ইসলাম তামিম, হাফিজুল ইসলাম লাবিব ও শাওন হাওলাদার। তাদের বয়স ৭ থেকে ৯ বছরের মধ্যে বলে দাবি করেছেন অভিভাবকরা। এরা সবাই বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার রুনশী ইউনিয়নের রুনশী গ্রামের বাসিন্দা।
হাইকোর্টের নির্দেশ বাস্তবায়ন করেন বরিশাল জেলা ও পুলিশ প্রশাসন, বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগার, যশোর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্র এবং সেখানকার স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ।
বাড়ি ফেরা শিশুরা (চেয়ারে বসা)বাকেরগঞ্জের ইউএনও মাধবী রায় জানান, উচ্চ আদালতের নির্দেশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওই শিশুদের অভিভাবকের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার কাজ শুরু করা হয়। শুক্রবার সকাল ৯টার মধ্যে তাদের অভিভাবকের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ সময় ইউএনওসহ বাকেরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম, জেলা প্রবেশন অফিসার সাজ্জাদ পারভেজসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
শুক্রবার সকালে শিশুদের অভিভাবকের কাছে নিয়ে গেলে সেখানে বুকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন সন্তানদের মা-বাবাসহ স্বজনরা। এ সময় শতশত গ্রামবাসী সেখানে উপস্থিত থেকে শিশু ও তাদের অভিভাবকদের সান্ত্বনা দেন।
শিশুকে কাছে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন এক অভিভাবকজেলা প্রশাসক এসএস অজিয়র রহমান জানান, উচ্চ আদালতের আদেশ পাওয়ার পর ওই ৪ শিশুকে অভিভাবকদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য শিশু আদালতের আদেশ বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। সেখান থেকে ওই আদেশ পাঠানো হয় যশোর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে। বরিশাল থেকে যথাযথ ব্যবস্থায় যশোর গিয়ে সেখান থেকে ওই শিশুদের আনা অনেক সময়ের ব্যাপার। তাই যশোর প্রশাসন ও পুলিশের সহায়তায় বিশেষ ব্যবস্থায় কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে ওই ৪ শিশুকে বরিশালে এনে স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে তাদের অভিভাবকের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
জেলা প্রশাসক আরও জানান, বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় হাইকোর্টের বিচারপতি মুজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীমের যৌথ বেঞ্চ ওই চার শিশুকে মুক্তি দেওয়ার আদেশ দেন। ওই আদেশে যশোরের জেলা প্রশাসককে পুলেরহাট শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে ওই চার শিশুকে শিতাতপ নিয়ন্ত্রিত মাইক্রোবাসে করে রাতের মধ্যেই অভিভাবকের কাছে পৌঁছে দিতে বলেন। সেইসঙ্গে বরিশালের সংশ্লিষ্ট সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে ১১ অক্টোবর বেলা সাড়ে ১১টায় সংশ্লিষ্ট উচ্চ আদালতে সশরীরে উপস্থিত থাকতে বলা হয়। একইসঙ্গে বাকেরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ওই চার শিশুকে তাদের অভিভাবকসহ একই তারিখে উপস্থিত থাকতে বলা হয়।
শিশুদের কাছে পেয়ে অভিভাবকদের কান্নাএ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ওই চার শিশু তাদের পরিবারের কাছে থাকবে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে, তদন্ত শেষে আসল রহস্য উদঘাটন হবে।’ এ সময় ওই চার শিশুর অভিভাবকদের অভিযোগও খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, বাকেরগঞ্জ উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের রুনসী গ্রামে খেলার ছলে শিশুকন্যা ধর্ষণের অভিযোগে গত ৬ অক্টোবর বাকেরগঞ্জ থানায় মামলা দায়েরের পর ওই ৪ শিশুকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ৭ অক্টোবর তাদের আদালতে প্রেরণ করলে আদালতের বিচারক তাদের যশোরের শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দেন। ৯ অক্টোবর উচ্চ আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তাদের জামিনের জন্য সংশ্লিষ্ট আদালতকে নির্দেশ দেন