নওগাঁর পত্নীতলায় অবশেষে অমানুষিক নির্যাতনকারী বড় ভাই সামসুজ্জোহা গ্রেপ্তার

আতাউর শাহ্, নওগাঁ প্রতিনিধিঃ
নওগাঁর পত্নীতলায় সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের জের ধরে হোমিও চিকিৎসক বড় ভাই সামসুজ্জোহার(৫০) জনসম্মুখে তাঁর ছোট ছোট বোন তহুরা বাবু ইতিকে (৪২) অমানুষিক বর্বরোচিত নির্যাতন করে মাথা ফাটিয়ে রক্তাক্ত করায় ঘটনায় অবশেষে সামসুজ্জোহাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। জেলার উধ্বর্তন পুলিশ কর্মকর্তা নির্দেশে মঙ্গলবার রাতে থানায় মামলা রেকর্ড এবং বড় ভাই সামসুজ্জোহাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

এই ঘটনায় হোমিও চিকিৎসক সামসুজ্জোহা, তার স্ত্রী, মেয়েসহ ৬ জনকে আসামী করে থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে মামলায় অন্য আসামীদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি থানা পুলিশ।

গত সোমবার রক্তাক্ত অবস্থায় কান্নাকাটির ঘটনাটি ফেইসবুকে ভাইরাল হয়ে গেছে। এ ঘটনায় থানায় কয়েকবার অভিযোগ দিতে গেলেও এলাকার প্রভাবশালী হোমিও চিকিৎসক সামসুজ্জোহার সাথে যোগসাজশে থানা ও পত্নীতলায় সার্কেল পুলিশ তা না নিয়ে তালবাহানা শুরু করেন বলে অভিযোগ করেন আহত তহুরা বাবু ইতি। তহুরা বাবু ইতি আরো বলেন, থানায় ও পত্নীতলায় সার্কেল পুলিশের সহযোগিতা না পেয়ে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হয়। এরপর পুলিশের উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে মামলাটি গ্রহণ করে থানা পুলিশ। সামসুজ্জোহা এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি হওয়ায় তিনি ও তার স্বামীর পরিবার এলাকায় চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

ছোট বোনকে প্রকাশ্যে দিবালোকে বর্বরোচিত নির্যাতনের ঘটনায় ঘটনাস্থলে উপস্থিত শতশত মানুষ চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং নির্যাতনকারী বড় ভাইয়ের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দাবী করেছেন স্থানীয়রা। আহত বোন বর্তমানে পত্নীতলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ইতির শরীরে একাধিক স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে এছাড়া তাঁর মাথায় ৫টি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে।

এই উপজেলা নজিপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন জোহা হোমিও হলের সামনে রবিবার বিকেলে শতশত মানুষের সামনে ঘটনা ঘটেছে।

অভিযুক্ত হোমিও চিকিৎসক সামসুজ্জোহা উপজেলার নজিপুর পৌরসভার ছোট চাঁদপুর মহল্লার মৃত তাছির উদ্দিনের ছেলে। আহত ছোট বোন তহুরা বাবু ইতির বড় ভাই সামসুজ্জোহা।

প্রত্যক্ষদর্শী ও আহতের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, চাঁদপুর মহল্লায় নিজ বাড়িতে জোহা হোমিও হল নামে তাঁর একটি হোমিও চেম্বার রয়েছে। ছোট বোন তহুরা বাবু ইতির সঙ্গে বেশ কিছু দিন ধরেই পৈত্তিক সম্পত্তির ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে ভাই-বোনদের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। রবিবার বিকেল ৩টার দিকে ছোট বোন ইতি বড় ভাই সামসুজ্জোহার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে তাঁর সম্পত্তি বুঝে দেওয়ার জন্য বললে উভয়ে বাগবিতন্ডায় শুরু হয়। এক পর্যায়ে বড় ভাই সামসুজ্জোহার নেতৃত্বে তার স্ত্রী, মেয়েসহ ৬জন ইতিকে ধারালো লাঠিসোডা ও অস্ত্র দিয়ে বেধড়ক পিটাতে থাকেন। এতে ইতির মাথা ফেটে গেলে সারা শরীর রক্তাক্ত হয়ে পড়লে সে এক সময় মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এ ঘটনা এমতাবস্তায় স্থানীয়দের সহায়তায় ইতিকে উদ্ধার করে রক্তাক্ত অবস্থায় পতœীতলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। বর্তমানে সেখানেই তিনি কেবিনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

আহত ইতির স্বামী আরিফ হোসেন সুমন জানান, পারিবারিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পৈত্তিক সম্পত্তি রদলবদল করা হয়েছে। আমার স্ত্রী ইতি ভাইকে সম্পত্তি ছেড়ে দিলেও ভাইয়েরা তাঁকে তাঁর সম্পত্তি বুঝে দিতে টালবাহানা করে আসছেন। এ বিষয়ে বারবার তাদের বলা হলেও তাঁরা কর্ণপাত করছেন না। সর্বশেষ ঘটনার দিনে ইতি একই বিষয়ে তাঁর বড় ভাই সামসুজ্জোহাকে তাগাদা দিলে গেলে বড় ভাই ও তার স্ত্রীসহ পরিবারের লোকজন তাকে পিটিয়ে মারাত্বক জখম করে এবং মাথা ফেটে দেন। এ ঘটনায় স্থানীয় পুলিশের কোন সহযোগিতা না পাওয়ায় পুলিশের উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

পত্নীতলায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ দেবাশীষ রায় জানান, ইতির মাথা ফেটে যাওয়ায় প্রচুর রক্ত খরন হয়েছে। তার শরীরে এক ব্যাগ রক্তও দিতে হয়েছে। তার মাথায় ৫টি সেলাই দেওয়া হয়েছে। মাথা ছাড়াও ডান হাত, কোমর ও হাঁটুর নীচে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

পত্নীতলায় থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সামসুল আলম শাহ্ আহতদের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এ ঘটনায় আগে কেউ কোন অভিযোগ দিতে আসেননি।

নওগাঁর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাকিবুল আকতার জানান, ঘটনায় মঙ্গলবার থানায় মামলা দায়ের করা হলে রাতে সামসুজ্জোহাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলার বাঁকি আসামীরা পলাতক থাকায় গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। তবে তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা হবে।#

সংবাদটি শেয়ার করুন

Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *