ধর্ষণ ও যৌনতা: কারণ ও প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে বিশিষ্টজনদের মন্তব্য।

আবু ইউসুফ নিজস্ব নিউজ রুম

এ.কে.এম. ইব্রাহীম খলিল উল্যাহ: একবিংশ শতাব্দীর বিশ্বে ধর্ষণ একটি মহামারি আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া একের পর এক ধর্ষণ গোটা জাতিকে উদ্বিগ্ন করে তুলছে। আর এই উদ্বিগ্নতা থেকেই ধর্ষণের পেছনের কারণগুলো ভাবতে হলো। কারণ একজন ধর্ষক কিন্তু ধর্ষক হয়েই জন্মায় না। জন্মের পর বিভিন্ন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে তার আচরণগত, চারিত্রিক ও মনস্তাত্তিক বিকৃতি ঘটে। অর্থাৎ ধর্ষক কিন্তু একদিনে তৈরি হয় না।

এড. মো. ওমর ফারুক (সভাপতি: সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগ) ও এনায়েত উল্যাহ বাবুল (সাধারন সম্পাদক: সুবর্ণচর উপজেলা বিএনপি) আমাদের মেঘনাকে বলেন, ধর্ষণের মতো মহামারি যদি রুখতে হয় তাহলে সেই জায়গাগুলোতে আগে পৌঁছাতে হবে, যেখানে সে একটু একটু করে ধর্ষক হতে থাকে। তারও মনোজগতের চিকিৎসা করা প্রয়োজন। আর এই চিকিৎসার জন্যই আগে রোগ চিহ্নিত করা আবশ্যক।

সাম্প্রতিক গৃহবধূসহ বিভিন্ন ধর্ষণের ঘটনায় ধর্ষকের ব্যাপারে বলা হচ্ছে তারা সন্ত্রাসী, মাদকাসক্ত ও মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত। হ্যাঁ, তারা সন্ত্রাসী ও মাদকাসক্তই ছিল। এখন ধর্ষণ রুখতে হলে আগেই এই সন্ত্রাস ও মাদক নির্মূল করতে হবে বলে মন্তব্য করেন এড. আবুল বাশার (চেয়ারম্যান: ৩নং চরক্লার্ক ইউনিয়ন পরিষদ) ও আবুল কালাম আজাদ (চেয়ারম্যান: ৮নং মোহাম্মদপুর ইউনিয়ন পরিষদ)। তারা আমাদের মেঘনাকে আরও বলেন, এ লক্ষ্যে দেশরত্ন শেখ হাসিনা সরকারের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

আতিক উল্ল্যাহ সুজন (রাজনীতিক ও সসমাজ সেবক) এবং আবু বক্কর ছিদ্দিক সোহাগ (সত্তাধিকারী: ইউনিক বিয়ারিং এন্ড মেশীনারিজ) উগ্র যৌনতার আরেক উৎস হিসাবে মনে করেন, প্রেমিক-প্রেমিকার অবৈধ আলাপন, ও অবৈধ সম্পর্ক।

সাম্প্রতিক সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দেশব্যাপী অভিযানে ও মিডিয়ার কল্যাণে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পার্ক, উদ্যানসহ ঝোপঝাড়ে তরুণ-তরুণীদের আপত্তিজনক অবাধ মেলামেশার দৃশ্য উঠে এসেছে। বেপর্দা এর অন্যতম কারণ বলে মনে করেন, মো. বাহার উদ্দিন ও আকতার হোসেন (ইতালী প্রবাসী)।

বিতর্কিত নারীর পোশাকের বিষয়টিও পুরুষজাতিকে নারীদেহের প্রতি আকৃষ্ট করে এবং যৌনতায় প্রণোদনা দেয়। তাই নারীদের পোষাকে শালীনতা থাকার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন, মামুন চৌধুরী (প্রো. জেড আর এন্টার প্রাইজ) ও কাজী নজরুল ইসলাম (প্রো. কাজী এন্টার প্রাইজ)।

ধর্ষণ, পুরুষের বিকৃত দৃষ্টিভঙ্গির দোষ। তাই দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণ এবং অবাধ মেলামেশা রোধ করাও অতীব জরুরি বলে মন্তব্য করেন, আমিনুল ইসলাম রাজিব (সাবেক চেয়ারম্যান: ২নং পূর্ব চরবাটা ইউনিয়ন পরিষদ) ও আবুল হোসেন মোহাম্মদ (চেয়ারম্যান: ফাহাদ লজিস্টিক গ্রুফ অব কোম্পানি, ওমান)।

ধর্ষণ রোধে পবিত্র কোরআনের বাণী হৃদয়ে ধারনের গুরুত্ব অপরিসীম বলে মন্তব্য করেন, জামাল উদ্দিন চৌধুরী (সিনিয়র সহ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক: ইবনে সীনা হাসপাতাল) ও মোহাম্মদ ছালেহ উদ্দিন (সহ-সভাপতি: চট্টগ্রাম বিভাগীয় নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়ন)। তারা বলেন পবিত্র কোরআনে আল্লাহ এরশাদ করেন, “তোমরা ব্যাভিচারের কাছেও যেয়োনা নিশ্চয় তা অশ্লীল কাজ ও মন্দ পথ” (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত-৩২)। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ আরো বলেন, “লজ্জাহীনতার যত পন্থা আছে এর নিকটেও যেওনা তা প্রকাশ্যে হোক বা গোপনে হোক” (সুরা আনআম, আয়াত-১৫১)।

আলহাজ্ব বশির আহমেদ (সভাপতি: ৩নং চরক্লার্ক ইউনিয়ন বিএনপি) ও বেলাল হোসেন সুমন (সভাপতি: সুবর্ণচর উপজেলা যুবদল) আমাদের মেঘনাকে বলেন, আমাদের দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি তো আছেই। সমাজকে অসুস্থ করে তোলে এই বিচারহীনতার সুযোগটি কাজে লাগিয়ে। ধর্ষণ করে বারবার পার পেয়ে যাওয়া বিকৃতমনা জনগোষ্ঠী বারবার ধর্ষণে লিপ্ত হয়, সিরিয়াল র‌্যাপিস্ট হয় কিংবা ধর্ষণের সেঞ্চুরিও করে।

আমাদের মেঘনা সম্পাদক নেয়ামত উল্যাহ তারিফ বলেন, ধর্ষণের পেছনে কেবল একটিমাত্র কারণ নয়, বরং ধর্ষকদের ধর্ষক হয়ে ওঠার বিষয় বিশ্লেষণ করলেই বেরিয়ে আসবে ধর্ষণের কারণ। সুস্পষ্টভাবে ধর্ষণের কারণ হিসাবে বলা যায় মাদক, পর্নোগ্রাফি, নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা, নৈতিক স্খলন, প্রেমিক-প্রেমিকার বিবেক বর্জিত অসামাজিক কার্যকলাপ, অশ্লীল সিনেমা ও গান কিংবা সাহিত্য, পাশ্চাত্য সংস্কৃতির অন্ধ অনুকরণ, অশ্লীল ও অসামাজিক কুরুচিপূর্ণ বিজাতীয় সংস্কৃতি, তথাকথিত আধুনিকতার নামে অসামাজিক শব্দচয়ন, সামাজিক ও ধর্মীয় এবং নৈতিক মূল্যবোধের অভাব।

এ সবকিছুই আল্টিমেটলি একজন মানুষকে বিকৃতমনা করে তুলতে পারে। আর বিচারহীনতার সংস্কৃতির সুযোগে সমস্যা থেকে সৃষ্টি হয় মহা সমস্যার, আকার ধারণ করে মহামারির। আর ধর্ষণমুক্ত একটি সুস্থ ও সুন্দর সমাজ বিনির্মাণ করতে হলে অবশ্যই এসব প্রাথমিক কারণ থেকেই সমস্যাগুলোকে রুখতে হবে নিশ্চিত করতে হবে ন্যায্য বিচার।

এভাবেই গড়ে উঠুক আদর্শ সমাজ। আগামীর দেশ, আগামীর বিশ্ব হোক আলোয় আলোয় উদ্ভাসিত।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *