বাবা মেয়ের দেখা(১৭)বছর পর খুশিতে আত্মহারা পরিবার।

নিউজ ডেস্ক
মাত্র (৮) বছর বয়সী মেয়েকে ঢাকা শহর দেখাতে নিয়ে যান বাবা। কাজের ব্যস্ততা থাকায় তাকে আত্মীয়ের বাসায় রেখে চলে যান। কিন্তু ফিরে এসে মেয়েকে আর পাননি। খুঁজতে থাকেন বিভিন্ন জায়গায়। আদরের সন্তানও খুঁজে বেড়িয়েছেন বাবাকে। অবশেষে (১৭) বছর পর দেখা হলো বাবা-মেয়ের। মেয়েকে পেয়ে খুশিতে আত্মহারা পুরো পরিবার।
ফেসবুকের কল্যাণে গতকাল শনিবার রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌর শহরের শান্তিনগর এলাকায় মেয়ে তানিয়া আক্তারের সন্ধান পান বাবা। তার বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ায়। বাবার নাম মো. সুন্দর আলী।

বর্তমানে তানিয়ার স্বামী রয়েছেন। তার স্বামীর নাম মো. আনোয়ার হোসেন। স্বামীর সঙ্গেই আখাউড়া পৌর শহরের শান্তিনগর এলাকায় থাকেন তিনি। তাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।

তানিয়ার বাবা সুন্দর আলী জানান, ঢাকায় একটি বাস কাউন্টারে চাকরি করতেন তিনি। (২০০৪) সালে মেয়েকে ঢাকা শহর দেখাতে নিয়ে যান। প্রথমে তাকে নিজ বোনের বাসায় রাজাবাজার নেন। এরপর ফুফুর বাসায় আগারগাঁও নেয়া হয়। কাজ থাকায় মেয়েকে রেখে বেরিয়ে যান তিনি।

কিছুক্ষণ পর ফুফুর মেয়ের সঙ্গে স্কুলে গেলে আর ফিরে আসেননি তানিয়া। সন্ধ্যা পর্যন্ত না ফেরায় বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করেও কোথাও পাওয়া যায়নি। মেয়ের সন্ধানে মাইকিং ও পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়া হয়। পাশাপাশি থানায় জিডি করা হয়।

তানিয়া জানান, স্কুলের সিকিউরিটি তাকে ভেতরে ঢুকতে দেননি। পরে তিনি রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকেন। রাস্তা-ঘাট না চেনায় একটি বাসে করে সংসদ ভবনের কাছে আসেন। সেখানে একটি দোকানে টেলিভিশন দেখতে দেখতে রাত হয়ে যায়। তখন বাসায় ফেরার জন্য অনেক কান্নাকাটি করেন। কিন্তু ঠিকানা বলতে না পারায় তাকে বাসায় নিয়ে যান একজন সনাতন ধর্মাবলম্বীর লোক। পরদিন তাকে বাবার কাছে পৌঁছে দিতে অনেক জায়গায় খোঁজ করেন।

তানিয়া বলেন, বাবাকে খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে কলাবাগান এলাকায় আরজুদা খাতুন মিলন ও তার ছেলে রিপনের সঙ্গে দেখা হয়। তারা আমাকে তাদের বাসায় নিয়ে যান। এরপর থেকে তারা আমাকে আদর-যত্নে বড় করে তোলেন। আমি রিপনকে বাবা বলে ডাকি। তারা আমাকে বিয়েও দেন। রিপনের গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার রায়তলা গ্রামে।

তিনি আরো বলেন, স্বামী আনোয়ার হোসেনের ফেসবুক আইডিতে আমার মায়ের ছবিসহ একটি পোস্ট দেয়া হয়। সেই সূত্র ধরে আত্মীয়-স্বজনের সহায়তায় পরিবারকে খুঁজে পাই।

দীর্ঘ ১৭ বছর পর মেয়েকে খুঁজে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তানিয়ার বাবা ও ছোট বোন। বাবা ও বোনকে দেখে চিনতে পারেন তানিয়া।

তানিয়ার স্বামী আনোয়ার হোসেন বলেন, আমি সবকিছু জেনেই তানিয়াকে বিয়ে করি। বিয়ের পর তার পরিবারের সন্ধান পেতে অনেক চেষ্টা করা হয়। আল্লাহর অশেষ রহমত থাকায় সেই ইচ্ছে পূরণ হয়েছে। আমি খুবই খুশি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *