কুলসুমের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশের পরেও থেমে গেছে তদন্ত

কাজী জোবায়ের আহমেদ : ঢাকার দোহার উপজেলাধীন বেগম আয়েশা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা প্রতিবেদনে অধ্যক্ষ কুলসুম বেগমের নিয়োগ ও বিদ্যালয়ের আভ্যন্তরীন বেশকিছু বিষয়ে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত বছরের ২১ অক্টোবরের এমন একটি প্রতিবেদনে অনিয়মের অভিযোগ এনে ও নিয়ম বহির্ভূত নিয়োগের বিষয়টি উল্লেখ করে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কুলসুম বেগমের বিরুদ্ধে বেতন ভাতা স্থগিতসহ বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়।

তবে দীর্ঘদিন পার হলেও তার বিরুদ্ধে কোনো প্রকার ব্যবস্থা নেয়নি শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর। এতে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে সচেতন মহলে। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, প্রধান শিক্ষকের স্বেচ্ছাচারিতার নানা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা প্রতিবেদন তৈরি করে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, কুলসুম বেগম (ইনডেক্স-২৭৮৭৯৯) ১/০৮/১৯৯২ তারিখে সহকারী শিক্ষক পদে যোগদান করেন এবং ১৫/০১/২০০৩ তারিখে প্রধান শিক্ষক পদে যোগদান করেন। তার প্রধান শিক্ষক পদের নিয়োগ রেকর্ড যাচাইয়ে দেখা যায়, একটি জাতীয় দৈনিকে পত্রিকায় ০২/১০/২০০২ তারিখে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ৮/১১/২০০২ তারিখে নিয়োগ পরিক্ষা গ্রহণ করা হয়। প্রধান শিক্ষক নিয়োগকালে ২৪/১০/১৯৯৫ তারিখের বিধি বলবৎ ছিলো। নীতিমালায় উল্লেখ আছে যে, ‘সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে কমপক্ষে তিন বছর অভিজ্ঞতাসহ শিক্ষকতায় নিরবিচ্ছিন্নভাবে বিদ্যালয়ে ১৫ বছর শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা। অথচ কুলসুম বেগমের আবেদনে উল্লেখ আছে ১০ বছর ২ মাস। অর্থাৎ তার নিয়োগকালে কাম্য অভিজ্ঞতা ছিল না বিধায় তার আবেদনপত্র বাতিলযোগ্য ছিল।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, প্রতিষ্ঠানের বেসরকারি খাতে আদায়কৃত টাকা ব্যাংকে জমা করা হয় না এবং ব্যাংকের মাধ্যমে ব্যয় নির্বাহ করা হয় না। এস.আর.ও নং১৫৫/আইন /২০০৯ এর ৪৫(১) অনুচ্ছেদের নির্দেশ মোতাবেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামে তফসিলি ব্যাংকে একটি হিসাব খুলে ৪৫(৩) মোতাবেক প্রতিষ্ঠানের সকল আয় উক্ত ব্যাংক হিসাবে জমা করতে হবে এবং চেকের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে। ৪৫ (৪) অনুচ্ছেদ মোতাবেক আদায়কৃত অর্থ ব্যাংকে জমা না করে নগদ ব্যয় করা যাবে না। প্রধান শিক্ষক কুলসুম বেগম উক্ত প্রবিধানমালার নির্দেশ অনুযায়ী হিসাব সংরক্ষণ না করায় ৪ ফেব্রুয়ারি ,২০১০-এ প্রণীত, মার্চ ২০১৩ পর্যন্ত সংশোধিত নীতিমালার ১৮ (১) (খ) অনুচ্ছেদ মোতাবেক প্রধান শিক্ষকের বেতন ভাতা স্থগিতসহ তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ হয়।

এবিষয়ে ক্যামেরায় কথা বলতে রাজি না হয়ে কুলসুম বেগম সাংবাদিকদের বলেন, এটা আপনাদের কাজ না, আপনারা কেন আসছেন। এটি দেখবে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের ব্যক্তিরা। তিনি আরও বলেন, পরিদর্শন ও নিরীক্ষা প্রতিবেদনে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন পরিদর্শক। আমরা এর লিখিত জবাব দিয়েছি।

এব্যাপারে ঐ সময়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক প্রফেসর অলিউল্লাহ মো. আজমতগীর বলেন, আমরা প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছি। পরবর্তী বিষয় মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নেবেন। এদিকে নানা অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগে কুলসুম বেগমের পদত্যাগের দাবিতে দুইদিনব্যাপী বিক্ষোভ করছে শিক্ষার্থীরা।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *